প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৫, ২০২৫, ৩:০৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ২:০০ অপরাহ্ণ
পুঁজিবাজারে অনিয়ম ঠেকাতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান ড. জাহিদের

পজিটিভ বিডি ২৪ডট নিউজ (ঢাকা): দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুঁজিবাজারে অনিয়ম রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যদি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ইস্যুতে কারসাজি, আন্ডাররাইটিং জালিয়াতি, ভুয়া বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট খোলা ও বাজারে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর মতো কর্মকাণ্ড বন্ধ করা না যায়, তাহলে পুঁজিবাজারে আস্থা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি রাজধানীতে নিজ বাসভবনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত ১৫ বছর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা উল্লেখ করে নানা নীতিমালা, নিয়মকানুন প্রণয়ন ও নির্দেশনা জারি করেছে।
তবে, এগুলোর বেশিরভাগই প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনেনি। যার ফলে শেয়ারবাজার আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)’র মতে, পুঁজিবাজার অবহেলিত হয়েছে এবং গত ১৫ বছর ধরে শেয়ারবাজারের সমস্যা সমাধান ও বিনিয়োগ উপযোগী নীতিমালা তৈরি করতে স্টেকহোল্ডাররা একবারও বৈঠকে বসেননি।
গত ১০ বছরে মাত্র ৬৫০ কোটি টাকার আইপিও বাজারে এসেছে। বাজারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ভাল মানের কোম্পানি খুবই অল্পসংখ্যক এসেছে। আর বিনিয়োগকারীর সংখ্যা গত ১০ বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা আরও কম। বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ এক শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। কর্পোরেট বন্ডের পরিমাণ এক শতাংশ বলা হলেও, প্রকৃতপক্ষে তা ০.৫১ শতাংশের বেশি নয়।
বিশ্লেষকরা গত ১৫ বছরে বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে রয়েছে- ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ, মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি ও শেয়ার লভ্যাংশকে তাদের রিটার্ন হিসেবে অনুমোদন দেওয়া এবং দুর্বল পারফরম্যান্সের কোম্পানিগুলোকে আইপিওতে আসার অনুমতি দেওয়া।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজারে গতিশিীলতা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বেশিরভাগ শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া।
বিএসইসি ইতোমধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে- বাজার তদারকি ও শৃঙ্খলা জোরদার করা, স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের নীতিমালা প্রণনয়ন, আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে বাজার বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠা করা, বাজারের ডিজিটাল রূপান্তর ও দেশব্যাপী আর্থিক শিক্ষার প্রসার। এগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য নতুন আর্থিক উপকরণ প্রবর্তন, কর ও নীতি কাঠামোর সমন্বয় এবং বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা প্রদানের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বিএসইসি পুঁজিবাজার সংস্কারের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্কফোর্সের কাজ ১১টি ফোকাস গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে, যার নিয়ন্ত্রক কাঠামো উন্নয়ন, শাসনব্যবস্থা, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও বাজার উদ্ভাবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর ওপর কাজ করছে।
প্রত্যেকটি ফোকাস গ্রুপের নিজস্ব কার্যপরিধি (টিওআর) রয়েছে, যা গবেষণা, নীতিমালা প্রণনয়ন এবং সামগ্রিক সংস্কার কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সুপারিশের দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেয়।
এই সমন্বিত পদ্ধতি পুঁজিবাজারের সামগ্রিক ও গভীর পরিবর্তন নিশ্চিত করবে, যা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে।
পুঁজিবাজার নিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান সমস্যা হল শাসনব্যবস্থার ঘাটতি। পাশাপাশি সেকেলে প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা কার্যকর লেনদেন বাজার পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিএসইসি শেয়ারবাজারের অভ্যন্তরীণ সংস্কার করেনি। এটাই আস্থার সংকটের এবং শেয়ারবাজারের প্রতি অবিশ্বাসের প্রধান কারণ। অতীতের বাজার কারসাজি এবং প্রতারণা বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা প্রায় অযৌক্তিকভাবে এবং মৌলিক বিশ্লেষণ ছাড়াই শেয়ার কেনেন। স্বার্থান্বেষী মহল তাদের এই আচরণের সুযোগ নিয়ে বাজার থেকে অর্থ লুটে নেয়।
অর্তনীতি ও রাজনীতিতে কোন সমস্যা দেখলে এখন মানুষ প্রকাশ্যে কথা বলতে পারে উল্লেখ তিনি বলেন, আমাদের আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে হবে। ‘আমি আশার আলো দেখতে পাই, কারণ এখন যদি কেউ অর্থনীতি বা রাজনীতির কোন সমস্যা দেখে, তাহলে সে বিনা চিন্তায় খোলামেলা কথা বলতে পারে। যদি এই উন্মুক্ততা বজায় থাকে এবং সরকার যদি প্রতিক্রিয়ার দরজা খোলা রাখে, তবে পরিবর্তনের আশা করা যায়। আর নেতারা যখন সবকিছু অস্বীকার করেন, তখনই আশা ম্লান হয়ে যায়।’
সম্পাদক : মোরশেদ মানিক
বি . এ, এল এল বি; ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম
প্রকাশক: রাহাতুল মওলা রাহাত
অফিসঃ মওলা সুপার মার্কেট, ঢাকা মোড়, বিরামপুর, দিনাজপুর।
মোবাইল: ০১৯১৫০৫০৩৫৮
ইমেল: morshedmanik.news@gmail.com editor@positivebd24.news
© 2023 Positivebd24. All rights reserved. Designed by moinulit