প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৫, ২০২৫, ২:১৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১০, ২০২৫, ১:৪০ অপরাহ্ণ
ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অন্তরার আয় এখন মাসে লাখ টাকার বেশি

পজিটিভ বিডি ২৪ডট নিউজ (ঢাকা): এক সময় নিজের কম্পিউটার মেরামত করার মতো টাকাও ছিল না দিনাজপুরের বধু অন্তরা মন্ডলের। এখন তার মাসিক আয় এক থেকে দেড় হাজার মার্কিন ডলার। টাকার অংকে যা এক থেকে দেড় লাখের বেশি। নয় ও তিন বছর বয়সী দুই মেয়ে এবং সাংসারিক কাজ সামলিয়েও অন্তরা সফলতা পেয়েছেন ফ্রিল্যান্স আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে।
অন্তরা বলছেন, প্রবল ইচ্ছা থাকলে মানুষ প্রতিকূলতা জয় করে এগিয়ে যেতে পারে— তা আমি প্রমাণ করেছি। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এ পর্যায়ে আসতে কষ্ট হয়েছে। তবে কখনও হাল ছাড়িনি। চেষ্টা করেছি নিজে কিছু করতে। এখন আমি স্বাবলম্বী, পারিবারিক খরচেও ভাল ভূমিকা রাখতে পারছি। এটা একটা অন্যরকম ভালো লাগা।
অন্তরা জানান, তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে ২০১৪ সালে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছেন অন্তরা। ২০১১ সালে স্মিথ সরেনকে বিয়ে করেন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম মেয়ে আরিয়ানা সরেনের জন্মের পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর গৃহিণী বনে যান তিনি। তবে কিছু একটা করার আগ্রহ তার সব সময়ই ছিল। বাইরে গিয়ে কাজ করবেন না— এমন ভাবনা থেকেই শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং।
সম্প্রতি যখন অন্তরা মন্ডলের সঙ্গে মোবাইলে কথা হচ্ছিলো, তখন তিনি দিনাজপুরে। ইংল্যান্ডের একটি কোম্পানির গ্রাফিক্সের কাজ করছিলেন। আলাপচারিতায় অন্তরা বলেন, বাড়িতে কম্পিউটার ছিল। তাই কম্পিউটারের সাধারণ কাজগুলো মোটামুটি জানা ছিল। কিন্তু ইন্টারনেটে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার ভাবনাটা আসে মায়ের কথায়। সমর্থন ও সক্রিয় সহযোগিতা করেন স্বামী স্মিথ সরেন।
তিনি ২০১৭ সালের শুরুর দিকে ফেসবুক ঘাটতে ঘাটতে নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটের সন্ধান পান। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সুবীর নকরেকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। অন্তরাকে ভর্তি করে দেন নকরেক আইটির গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সে। তখন গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না অন্তরার। তখন অন্তরার মেয়ের বয়স মাত্র সাত মাস। সাত মাস বয়সী মেয়েকে কোলে বসিয়েই কাজ শেখা শুরু করেন অন্তরা।
অন্তরা বলেন, কাজ করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। কিন্তু সেসব কিছুই তাকে থামাতে পারেনি। কখনো কখনো কাজ শিখতে গিয়ে সারা রাত কেটে যেত। ভোর হতো চোখের সামনে। শুরুর দিকে একবার কম্পিউটারের মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে যায়। সেটি সারানোর মতো টাকাও ছিল না তখন তার। এখন অন্তরার এক ভাই রাশিয়ায় পড়ালেখা করেন, বোন স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়েন। সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। অন্তরার এখন দুই মেয়ে।
অন্তরার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। পড়াশোনা ঢাকায়, বিয়ে হয়েছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। শহরের লক্ষ্মীতলায় তাদের আবাস। সেখানে বসেই সংসার সামলে অবসরে চালিয়ে যান ফ্রিল্যান্সিং। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রথমে কাজ পাচ্ছিলাম না। তবে কিছুদিন করতে করতে ফাইভারের (অনলাইনে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং কাজের ওয়েবসাইট) সন্ধান পান। একটি লোগো ডিজাইন করে মাত্র পাঁচ ডলার আয় করেন তিনি।
‘সেই থেকে শুরু। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। গ্রাফিক্স ডিজাইন দিয়ে শুরু করলেও চাহিদা বিবেচনায় ওয়েব ডিজাইন ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কোর্স করেছি। যা খুবই দরকার ছিলো। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমার গ্রাহক রয়েছে। প্রতিমাসে নূন্যতম লাখ টাকা আয় করতে পারি।’
অন্তরা বলেন, দুই সন্তান আরেকটু বড় হলে আশা করি আরও সময় দিতে পারবো। তখন আয়ও বাড়বে। অন্তরা সংসার-সন্তান সামলিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শিখেছেন। স্বাবলম্বী হয়ে সংসারে ভূমিকা রাখছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার মতামতও গ্রাহ্য হচ্ছে। তিনি চান তার মতো এদেশের প্রতিটি মেয়েই স্বাবলম্বী হোক, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হোক ঘরে বসেই।
এদিকে আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তথ্য প্রযক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য ‘তথ্য আপা’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৪৯০টি তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি উঠান বৈঠক করে তৃণমূলে নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা যেমন, রক্ত পরীক্ষা, ওজন মাপা, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ই-মেইল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, কনফারেন্সিং, পরীক্ষার ফল ও সরকারি বিভিন্ন সেবার বিষয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।
‘আমার ইন্টারনেট আমার আয়’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ২,৩০৪ জনকে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ডাটা এন্ট্রি, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ওয়েব পেজ ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘নারীর দক্ষতা উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে ফ্রিল্যান্সিং/আউটসোসিং’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সাবেক সমন্বয়ক হাছিনা বেগম বলেন, সরকার নারীর উন্নয়নে এ ধরনের আরও কয়েকটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। এতে তরুণরা আউটসোর্সিংয়ে আরও আগ্রহী হবে বলে আমরা মনে করি।
এদিকে অন্তরার ভাষায়, আমি চাই মেয়েরা সংসার সামলে উপার্জনও করুক। এতে আমাদের মেয়েরা যেমন এগিয়ে যাবে, দেশও এগিয়ে যাবে। আমি ক্ষুদ্র জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি কয়েকজন মেয়েকে কাজ শেখাতে। অনেকে শিখে আয় করছেন, কেউ আবার ছেড়েও দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই নারীর সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া না। চেষ্টা থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব। আমি আমার পরিবারকে বুঝিয়েছি এবং কাজ করার সুযোগটাও পেয়েছি। নিজের পরিবারকে বোঝাতে পেরেছি বলেই আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদেরও বোঝাতে পারছি।’
অন্তরা মনে করেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো করতে হলে কোনো বাধা এলে থেমে যাওয়া যাবে না। পরিশ্রম ও ধৈর্য নিয়ে কাজ শিখে দক্ষ হতে হবে। তাহলে কাজ খুঁজতে হবে না, কাজই আপনাকে খুঁজে নেবে।
সম্পাদক : মোরশেদ মানিক
বি . এ, এল এল বি; ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম
প্রকাশক: রাহাতুল মওলা রাহাত
অফিসঃ মওলা সুপার মার্কেট, ঢাকা মোড়, বিরামপুর, দিনাজপুর।
মোবাইল: ০১৯১৫০৫০৩৫৮
ইমেল: morshedmanik.news@gmail.com editor@positivebd24.news
© 2023 Positivebd24. All rights reserved. Designed by moinulit