বৃহস্পতিবার, ২০শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ঢাকা চেম্বারের ৪২টি প্রস্তাবনা

আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ঢাকা চেম্বারের ৪২টি প্রস্তাবনা

পজিটিভ বিডি ২৪ডট নিউজ (ঢাকা): ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ আজ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভূক্তির জন্য ঢাকা চেম্বারের ৪২টি প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’র (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে পেশ করেছেন।

আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এনবিআর এবং ঢাকা চেম্বারের মধ্যে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এ প্রস্তাবনা পেশ করেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড মূসক (ভ্যাট) হার ১৫ শতাংশ থাকলেও বিভিন্ন খাতে তা কমিয়ে ১০ শতাংশ, ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ হারে নির্ধারণের ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য জটিলতা সৃষ্টির পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে বিরোধ তৈরি হচ্ছে। উপরন্তু উপকরণ কর রেয়াতের সুবিধা সর্বক্ষেত্রে নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী বাড়তি করের বোঝা বহন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন বাস্তবতায়, আগামী বাজেটে ভ্যাটের হার সিঙ্গেল ডিজিট নির্ধারণের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের ভ্যাট ১ শতাংশ হারে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছে ঢাকা চেম্বার। যার মাধ্যমে সামগ্রিক কর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসার পাশাপাশি ব্যবসার পরিচালন ব্যয় হ্রাস পাবে এবং উৎপাদন খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে এ বাণিজ্য সংগঠনটি।

ডিসিসিআই’র প্রস্তাবসমূহে করজাল সম্প্রসারণ ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ, করহার হ্রাসকরণ, ব্যবসা-বান্ধব করনীতি ও অটোমেশন ব্যবস্থা চালু, মূসক ব্যবস্থার সংষ্কার, স্থানীয় শিল্প ও উৎপাদন খাতের সুরক্ষা, আমদানি শুল্ক ও ট্যারিফ ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং ব্যক্তি শ্রেণির কর কাঠামোর সহজীকরণ প্রভৃতি বিষয়ের উপর জোরারোপ করা হয়।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ আগামী অর্থবছর থেকে সব করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রদান কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করায় এনবিআরকে অভিনন্দন জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী দেশে টিনধারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখের বেশি হলেও ২০২৪ সালের ১ জুলাই হতে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩৭ লাখের বেশি।

যার মধ্যে অনলাইনে জমা পড়েছে মাত্র ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯টি। দেশে করদাতার হার বৃদ্ধি এবং করজাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এনবিআরকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি।

এছাড়াও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজে অনলাইনে কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে অটোমেটেড কর রিটার্ন পদ্ধতি চালু করার উপর জোর দেন তাসকীন আহমেদ। বিদ্যমান ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হতে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণের আহ্বান জানান তিনি। তাছাড়াও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে পণ্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রীম কর ৫ শতাংশ থেকে ধাপে-ধাপে হ্রাস এবং আমদানি পর্যায়ে উৎপাদনকারীদের জন্য বিদ্যমান অগ্রীম কর পর্যায়ক্রমে বিলুপ্তির প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ট্যারিফ ভ্যালু ও বাজার মূল্যের মধ্যে পার্থক্য থাকায় ব্যবসায়ীদের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে। যা

ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি প্রক্রিয়াকে জটিল ও ব্যয়বহুল করে তুলছে। এমতাবস্থায় তিনি ট্যারিফ ভ্যালুর পরিবর্তে নির্দিষ্ট হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট রাজস্ব নীতিমালার ক্রমান্বয়ে সংষ্কারের মাধ্যমে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে এনবিআর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করজাল সম্প্রসারণে বদ্ধপরিকর, কারণ সমাজে কেউ কর দেবে কেউ দেবেনা, তা মোটেও  গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, গত ১০বছরে টিনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ছাড়ালেও কর প্রদানকারীর সংখ্যা কাঙ্খিত মাত্রায় বাড়েনি, যা বেশ হতাশাব্যঞ্জক। তিনি আরো বলেন, আয়করের মতো করপোরেট ট্যাক্স প্রদানের প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইনে দাখিলের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে কর্পোরেট করের হার কমানো প্রয়োজন বলে এনবিআর চেয়ারম্যান মত প্রকাশ করেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশের ব্যবসায়ী সমাজ একমত পোষণ করলে ভ্যাটের বিভিন্ন স্তর বহাল না রেখে, সরকার ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে আগ্রহী। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের স্বদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা একান্ত অপরিহার্য। ভ্যাট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার লক্ষ্যে প্রয়োজনে দেশীয় তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এনবিআর একটি সফটওয়্যার তৈরি করে দিতে আগ্রহী এবং এ বিষয়ে তিনি ব্যবসায়ী মহলের সহযোগিতা কামনা করেন। আগামী অর্থবছরে কর রেয়াত ব্যবস্থা আরো উদার করতে এনবিআর আগ্রহী বলেও জানান তিনি।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান সহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

১২ Views
CATEGORIES

COMMENTS