প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৫, ২০২৫, ১:১১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪, ১:০৭ অপরাহ্ণ
আমার ছেলের রক্তে নতুন প্রাণে জেগে উঠুক বাংলাদেশ : শহীদ জননীর আর্তি

পজিটিভ বিডি ২৪ডট নিউজ (নাটোর): “আমার ছেলেকে তো আর ফিরে পাবো না। দেশের জন্যে ও রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে। আমার ছেলের রক্তে নতুন প্রাণে জেগে উঠুক বাংলাদেশ”-এই আর্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’র আন্দোলনে নিহত শহীদ রমজানের মা অজুফা বেগমের।
ঢাকার বাইপাইলে ৫ আগস্টে আন্দোলনের ক্যানভাসটা ছিলো রক্ত ঝরানো। বেলা ১১টার দিকে বের হওয়া মিছিলে একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন শহীদ রমজান। পুলিশের গুলি রমজানের বুকের বাম পাশে বিদ্ধ হয়ে বের হয়ে যায় পিঠ চিরে। রাজপথ ভেসে যায় শ্রমজীবী রমজানের তাজা রক্তে। গুরুতর আহত রমজানকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর দুপুরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
অজুফা বেগমের ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন রমজান আলী (৩০)। নাটোরের চলনবিল অধ্যুষিত সাঁঐল হাজীপাড়া গ্রামে কেটেছে তার শৈশব-কৈশরের দূরন্ত দিনগুলো। বাবা-মা’র অভাবের সংসার। নিজের চেষ্টায় কতুয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি আর কলম ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে চলে যান ঢাকা। কাজ নেন একটা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। একই কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুবাদে সেখানেই প্রেম আর বিয়ে। ঘর আলো করে আসে সুকন্যা। আসে অভাবও। পাড়ি জমালেন সৌদি আরবে। কিন্তু বাবা-মা, ভাই- বোন আর স্ত্রী-কন্যার জন্যে পরান পোড়ে। চলে আসলেন দেশে। এবার বাড়িতে থেকে নতুন সংগ্রাম, কাজ শুরু করলেন রাজমিস্ত্রির। কিছুদিন পরে আবারো পেশার পরিবর্তন। ঢাকার বাইপাইলে এসে যোগ দেন মাছের আড়তে আর স্ত্রী একটা গার্মেন্টসে। দু’জনার উপার্জনে মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার। মাঝেমাঝে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন। সুযোগ পেলে মায়ের হাতে তুলে দেন কষ্টার্জিত টাকা। বাবা-মায়ের জন্য যেন একটু বেশী দরদ, অন্য ভাই-বোনদের চেয়ে। এই বয়সেও বাড়ি ফিরলে মা নিজ হাতে মুখে ভাত তুলে খাওয়ান।
অজুফা বেগম জানান, “এই ঈদেও বাড়ি আসলে আমি রমজানকে ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে খাইয়েছি। ও ছিলো আমার আদরের ধন।”
শহীদ রমজানের চাচাতো ভাই পোল্ট্রি খামারি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “রমজান আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। কিন্তু সে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো। বাড়িতে আসলে সকল আতœীয়-স্বজনের সাথে গিয়ে দেখা করতো।”
কতুয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “রমজান ছিলো মেধাবী আর বিনয়ী। এমন ছাত্র খুব কম দেখা যায়। মহান আল্লাহ তাকে বেহেশত নসীব করুন।”
শহীদ রমজানের বাবা নজরুল ইসলাম সন্তান হত্যার বিচার দাবী করে বলেন, “আমি সকল হত্যাকান্ডের বিচার চাই, সকলের জীবন উৎসর্গের স্বীকৃতি চাই। জেলা প্রশাসক মোঃ মাছুদুর রহমান আমাদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সাথে আমার মেয়ে ময়নাকে সাথে নিয়ে দেখা করতে গেলে তিনি জানিয়েছেন, সকল শহীদ পরিবারকে মাসিক ভাতা দেওয়া হবে।”
“আমার সব ছেলে-মেয়ের মধ্যে রমজান ছিলো সবচে দরদি। এমন সোনার ছেলে আর কোথায় পাই?”-বললেন অজুফা বেগম। শহীদ মায়ের আহাজারিতে চারপাশের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, “রমজান তো আর ফিরবে না, আর কোন মায়ের ছেলে যেন প্রাণ না হারায়, তারা যেন ঘরে ফেরে। তাদের জন্যে দেশ হোক বাসযোগ্য।”
ছবির মতন সবুজ প্রকৃতি দিয়ে সাজানো শহীদ রমজানের বাড়ির পাশেই গদাই আর গুড়নই নদীর মিলিত মোহনা। এ নদী বয়ে যাবে নিরবধি। কিন্তু নদীপাড়ের এক চিলতে টিনের বাড়িতে রমজান আর ফিরবেন না। পাশের গোরস্তানে চির নিদ্রায় শায়িত তিনি আজ। দেশ-দেশান্তরে কর্মের খোঁজে ছুটে চলা শ্রমজীবী মানুষটা মনে হয় বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই দেশের জন্যে জীবন দিয়ে ঘুমিয়ে গেছেন চিরতরে।
কিন্তু জীবন দেয়া শত শহীদের রক্তেই নতুন করে জ্বলে উঠবে বাংলাদেশের প্রাণ।
সম্পাদক : মোরশেদ মানিক
বি . এ, এল এল বি; ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম
প্রকাশক: রাহাতুল মওলা রাহাত
অফিসঃ মওলা সুপার মার্কেট, ঢাকা মোড়, বিরামপুর, দিনাজপুর।
মোবাইল: ০১৯১৫০৫০৩৫৮
ইমেল: morshedmanik.news@gmail.com editor@positivebd24.news
© 2023 Positivebd24. All rights reserved. Designed by moinulit