ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরার মতো কোনো পদক্ষেপ আমরা নিতে পারি না : মির্জা ফখরুল


পজিটিভ বিডি ২৪ডট নিউজ (ঢাকা): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা এমন কোন পদক্ষেপ নিতে পারি না যাতে করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য এবং গণঐক্যে ফাটল ধরে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে হবে।’
বিদ্যমান ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য এই দেশ এবং দেশের মানুষের মূল চালিকা শক্তি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই ঐক্যকে অক্ষুণ্ন রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। এই ঐক্যের চর্চাকে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত করতে হবে। আমরা এমন কোন পদক্ষেপ নিতে পারি না যাতে করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য এবং গণঐক্য বিনষ্ট হয় অথবা ফাটল ধরে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে হবে।’
আজ শনিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ ও স্প্রেডশিট নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
শুরুতেই বিএনপি মহাসচিব ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চালানো নজিরবিহীন হামলায় নিহতদের জন্য শোকপ্রকাশ করেন ও ইসরায়েলী আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান।
লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ফ্যাসিবাদ বিরোধী রক্তঝরা আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার ভিত্তিক এবং বৈষম্যহীন একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য দেশের জনগণ অপেক্ষমাণ।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ উত্তর রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে নানা প্রস্তাব আর মতামত উঠে এসেছে সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের মাধ্যমে, যার মূল ভিত্তিটা রচনা করেছে বিএনপি ৩১ দফা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক শক্তি সমূহের অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব সমূহ গৃহীত এবং বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি প্রদানের জন্য একটি নির্বাচিত সংসদই কেবল উপযুক্ত ফোরাম।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংস্কার আগে-নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে-সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সাথে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরি হতে পারে যা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হবে।
তিনি বলেন, এমতাবস্থায় এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূলত করণীয় হচ্ছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। নির্বাচিত সরকার জনগণের কাঙ্ক্ষিত ঐকমত্যের সংস্কার সমূহ সম্পন্ন করবে।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো স্প্রেডশিট এ যে পছন্দগুলোর ঘরে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে, যে বিষয়গুলো প্রস্তাবাকারে আসতে পারতো তা প্রস্তাবাকারে না রেখে হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কি না? হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কি না? একইভাবে ‘গণভোট’, ‘গণপরিষদ এবং আইন সভা’ হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কি না ইত্যাদি হ্যাঁ – না বলুন।
তিনি বলেন, সংবিধানের ‘প্রস্তাবনার’ মত অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয় নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মত প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা প্রায় ১২৩ টির মত।
একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মত সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই আমরা মনে করছি- স্প্রেডশিটের সাথে মূল সুপারিশমালার ওপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটের অবস্থা এবং কমিশন সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায় যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে, সকল বিষয় যেন একটি পূর্ব নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনার অংশ যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কি না বলা মুশকিল। সুপারিশমালা সমূহ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে যা অনভিপ্রেত।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সমূহ পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে রাজনীতিবিদরা অপাঙ্ক্তেয় এবং অনির্বাচিত লোকদের জন্যই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করা শ্রেয়।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই বর্তমান সময়ের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সকল সংস্কার প্রচেষ্টা পরিচালিত হবে, এটাই জাতীয় প্রত্যাশা।
সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল জানান, ‘তিনি উপযুক্ত সময়ে দেশে ফিরবেন।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান প্রমুখ।
২১ Views