বিরামপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষগন মানছেন না; কোচিং বাণিজ্য নীতিমালা!


মোরশেদ মানিক : বিরামপুরে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষকগন মানছেন না কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২। বিরামপুর শহর সহ যত্রতত্র অবাধে চলছে কোচিং বাণিজ্যের প্রচারনা, এতে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষকগণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ এ বলা হয়েছে সরকারি-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর অধীনে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।আর ও উল্লেখ রয়েছে কোনো সরকারী সুবিধাভোগি শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর এমপিও স্থগিত বা বাতিল, বেতন ভাতাদি স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবেন।
সরজমিনে গিয়ে কয়েটি এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক কোচিং বানিজ্যে জড়িত, তথ্য মিলেছে। তাঁরা হলেন-আবু সাঈদ স্যার, শরিফুল ইসলাম স্যার, বাদশা আলমগীর স্যার, শান্ত স্যার, আলমগীর কিবরিয়া স্যার, ওমর ফারুক স্যার, সারোয়ার জাহান উজ্জল স্যার, সাব্বির স্যার, সাহাদত স্যার, মোসলেম স্যার, জাহাঙ্গীর স্যার, মানিক স্যার, আলমগীর স্যার, মামুন স্যার, আলমাস স্যার, আহসান হাবিব স্যার, মমিনুল ইসলাম, সৈয়দ লুৎফর রহমান বাবু স্যার, মমিনুর রশিদ স্যার,………………। আরও অনেক সহকারী শিক্ষক নিজ বাড়ী ও শিক্ষার্থীর বাড়িতে প্রাইভেট পড়াতে যান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বদনাম হয়, তাই নাম দেওয়া হল না। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানগন ও মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তর কি ব্যবস্থা নেয়, সেটার পর্যালোচনা করবে এবার পাঠক গন।
কোচিং বানিজ্য বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনিম আওনের নিকট জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষনিত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শমসের আলী মন্ডলকে তদন্ত করে নীতিমালা অনুযায়ী দায়ীদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নিদের্শনা দিয়েছেন বলে জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শমসের আলী বলেন, নীতিমালার বাইরে কোন সহকারী শিক্ষক প্রাইভেট অথবা কোচিং বাণিজ্য করলে সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালত করতে হলে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

অভিভাবক গন স্যারদের প্রতি বিনয়ের সাথে বলেন, কোচিং বাণিজ্য এখন মহামারিতে পরিণত হয়েছে। যেহেতু একই শিক্ষক স্কুলে পড়ান, আবার (অতিরিক্ত ক্লাস) কোচিং ও প্রাইভেট পড়ান এর ব্যতয় হলে শিক্ষাথীকে স্কুলে নানাভাবে হেয় করে, পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়। ৪/৫টি বিষয়ে (অতিরিক্ত ক্লাস) কোচিং এবং প্রাইভেট পড়াাতে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রাইভেট এবং কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২ বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেন। অভিভাবক গন জানান , তাদের শৈশবকালে প্রাইভেট পড়ানোকে মহান শিক্ষকগন জ্ঞানদান মনে করতেন, আর এখনকার শিক্ষকরা শিক্ষাকে করেছে বানিজ্যীকরন।

অতীতে শিক্ষা পন্য ছিল না, এখন মনোভাবের পচন ধরেছে। এর ভুক্তভোগী হতদরিদ্র, দরিদ্র ও মধ্যবৃত্ত পরিবারের অভিভাবকেরা। তারা তাদের সন্তানদের পারছেনা প্রাইভেট পড়াতে : মিলছে না তাদের সন্তানদের সঠিক মূল্যায়ন। এমনই মন্তব্য জাহানারা আকতার সহ হয়ত অনেকের।এমন দু:সময়ে অভিভাবকগন তাদের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। অভিভাবকগন বলেন, আমাদের পিতা-মাতারা সত্যিই ভাগ্যবান ; তাদের সময় কোন বানিজ্যিক শিক্ষক ছিল না, এখনকার মত।
আবার এমপিও ভুক্ত কয়েক সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক বলেন, কিছু অভিভাবকের অনুরোধ রক্ষায় তাদের এ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে। প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্যের কারনে দরিদ্র ও মধ্যবৃত্ত অভিভাবকদের সন্তানরা নানা ভাবে প্রতিভা বিকাশে হচ্ছে বঞ্চিত।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষার্থী সংকটের মুল কারন ,জানান চাঁদপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ.ছ.ম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, সকাল ১০ থেকে বিকেল ৪ টা পযন্ত প্রতিষ্ঠানে পাঠ দান চলে। কিন্তু একই সময় কোচিং সেন্টারগুলি চালু থাকায়, অধিকাংশ শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী উপস্থিত নিশ্চিত করতে হলে, সকাল ১০ থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার প্রস্তাবনা দেন তিনি।
বৈষম্য বিরোধী এলাকাবাসীরা বলেন, শিক্ষাকে বানিজ্যিক ভাবে আর চলতে দেয়া উচিত নয়। সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ধনী-গরীবের বৈষম্য দূর করতে হবে।
৬৩ Views
CATEGORIES Uncategorized